কৃত্রিম উপগ্রহের ইতিবৃত্ত! পর্বঃ ২

কৃত্রিম উপগ্রহের ইতিবৃত্ত! পর্বঃ ২


'স্যাটেলাইট কত প্রকার ও কি কি?
মূলত স্যাটেলাইট তিন(০৩) প্রকার,
ক। লো-আর্থ অরবিট (LE0-Low Earth Orbit)
খ। মিডিয়াম আর্থ অরবিট (ME0- Medium Earth Orbit)
গ। জিওস্টেশনারি আর্থ অরবিট (GE0-Geostationary Earth Orbit)
লো-আর্থ অরবিট (LEO-Low Earth Orbit)
লো-আর্থ অরবিট এর স্যাটেলাইট পৃথিবীর পৃষ্ঠ হতে ১৬০-২,০০০ কি.মি. উপড়ে অবস্থান করে। যে স্যাটেলাইটগুলাতে দ্বারা পৃথিবীকে পর্যবেক্ষণ করা হয় সাধারণত সেই স্যাটেলাইটগুলাকেই এই কক্ষপথে রাখা হয় । যেহেতু এই স্যাটেলাইটগুলাতে পৃথিবী পৃষ্ঠের খুব কাছাকাছি অবস্থান করে তাই এই স্যাটেলাইটগুলাতে দ্বারা প্রায় নিখুঁত ভাবে পৃথিবীকে পর্যবেক্ষণ করা যায় । এই কক্ষপথেই আন্তর্জাতিক স্পেস ষ্টেশনের অবস্থান।
মিডিয়াম আর্থ অরবিট (MEO- Medium Earth Orbit)
মিডিয়াম আর্থ অরবিটের স্যাটেলাইট পৃথিবীর পৃষ্ঠ হতে ২০,০০০ কি.মি. উপড়ে অবস্থান করে। এই কক্ষপথের স্যাটেলাইটগুলাতে পাঠাতে অনেক শক্তির দরকার পরে । মিডিয়াম আর্থ অরবিটের স্যাটেলাইটগুলোর গতিবেগ খুবই মন্থর হয়ে থাকে। মোট ১২টি মিডিয়াম আর্থ অরবিটের স্যাটেলাইট দিয়ে পুর পৃথিবীতে সংযোগ করা যায়, এর সংখ্যা জিওস্টেশনারি আর্থ এর থেকে বেশি কিন্তু লো-আর্থ এর তুলনায় বেশ কম হয় । এই কক্ষপথে সাধারণত জিপিএস স্যাটেলাইটগুলাতে থাকে।
জিওস্টেশনারি আর্থ অরবিট (GEO-Geostationary Earth Orbit)
জিওস্টেশনারি আর্থ অরবিটের স্যাটেলাইট পৃথিবীর পৃষ্ঠ হতে ৩৬,০০০ কি.মি. উপড়ে অবস্থান করে। এই স্যাটেলাইটের ক্ষমতা অনেক বেশি হয় । টিভি এবং রেডিও ট্রান্সমিশনে এর কাজে জিওস্টেশনারি আর্থ অরবিট। ব্যাবহার করা হয়। সাধারণত অ্যান্টেনার একটা নির্দিষ্ট অবস্থান থেকে এই কক্ষপথে ।
কাজের উপরে ভিত্তি করে স্যাটেলাইটের প্রকারভেদঃ
কাজের উপরে ভিত্তি করে স্যাটেলাইটকে বেশ কয়েকভাবে ভাগ করা যায় যেমন, ক্যুনিকেশন স্যাটেলাইট, ওয়েদার স্যাটেলাইট, ন্যাভিগেশন স্যাটেলাইট, প্রোগ্রাড স্যাটেলাইট, রেট্রোগ্রাড স্যাটেলাইট, হম্যান স্যাটেলাইট, পোলার স্যাটেলাইট, সান সিষ্ক্রোনাস অরবিট স্যাটেলাইট ইত্যাদি। চলুন এগুলো সম্পর্কে কিছুটা ধারনা নেই এবার।
কমুনিকেশন স্যাটেলাইট (Communication Orbit):
নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে তথ্যের আদান প্রদান করার জন্য এই স্যাটেলাইট ব্যাবহার করা হয়। কমুনিকেশন এই সিস্টেমকে স্পেস কমুনিকেশনও বলা হয়ে থাকে। এর মাঝে ব্রডকাস্টিং স্যাটেলাইট অন্তর্ভূক্ত। পাওয়ার সাপ্লাই, ট্রান্সমিটার বা প্রেরক যন্ত্র, রিসিভার বা গ্রাহক যন্ত্র এবং অ্যান্টেনা নিয়ে এই স্যাটেলাইট গঠিত।
কমুনিকেশন স্যাটেলাইট সিস্টেমে আর্থ স্টেশনের ট্রান্সমিটার হতে মডুলেটেড সিগন্যাল বা মাইক্রোওয়েভ স্যাটেলাইটে পাঠানো হয়। তারপরে স্যাটেলাইট ঐ মডুলেটেড সিগন্যালকে বিবর্ধিত করে পৃথিবীর গ্রাউন্ড স্টেশনে পাঠায় । এই ভাবে সিগন্যাল গ্রহন এবং সেটা বর্ধিত করে আবার গ্রাহক স্টেশনে পাঠাবার মাধ্যমেকমুনিকেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
ওয়েদার স্যাটেলাইট (Weather Orbit):
ওয়েদার স্যাটেলাইটের দ্বারা পৃথিবীর আবহাওয়া সংক্রান্ত ফটো ধারন করা হয়ে থাকে। কিছু ওয়েদার স্যাটেলাইট হলাে GE0s , coSM0s এবং TIR0s স্যাটেলাইট । আবহাওয়া পর্যবেক্ষনের সকল কাজ ওয়েদার। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে করা হয়ে থাকে ।
ন্যাভিগেশন স্যাটেলাইট (Navigation Orbit):
এই স্যাটেলাইট মূলত পথ নির্দেশনা করার কাজে ব্যাবহার করা হয় যেমন, সমুদ্রগামী জাহাজ ডিটেক্ট এবং বিমান ইত্যাদি এর পথ নির্দেশনা দিতে ন্যাভিগেশন স্যাটেলাইট ব্যাবহার করা হয়ে থাকে। GPSNAVSTAR এমনই একটি স্যাটেলাইট । আবার জিপিএস এমন একটি স্যাটেলাইট নেভিগেশন মাধ্যম, এখানে সময়ে এবং যেকোন আবহাওয়াতেই নিরবিচ্ছিন্নভাবে যেকোনাে তথ্য এবং পৃথিবীর যে কোন অবস্থানের ছবি পাঠানাে যায় । ২৪টা স্যাটেলাইট দ্বারা এই সিস্টেম তৈরি করা হয়।
প্রোগ্রাড স্যাটেলাইট (Prograde Orbit):
প্রোগ্রাড স্যাটেলাইটের অরবিটের সাথে পৃথিবীর কোন এক সমকোন এর থেকে কম হয়ে থাকে। সাধারনত পৃথিবীর ঘূর্ণন যে দিকে হয় প্রোগ্রাড স্যাটেলাইটও ঐ একই দিকে ঘােরে ।
রেট্রোগ্রাড স্যাটেলাইট (Retrograde Orbit):
রেট্রোগ্রাড স্যাটেলাইট প্রোগ্রাড স্যাটেলাইটের ঠিক উল্টো কাজ করে। এই অরবিটের সাথে পৃথিবীর কোন এক সমকোন এর থেকে বেশি হয়ে থাকে। আবার এই স্যাটেলাইট পৃথিবী যে দিকে ঘোরে তার বিপরীত দিকে ঘোরে ।
হম্যান স্যাটেলাইট (Hohmann Transfer Orbit):
এই স্যাটেলাইট জিওস্টেশনারী স্যাটেলাইটের সাহায্যে ব্যাবহার করা হয় নির্দিষ্ট গন্তব্যে এর অরবিটে সিগন্যাল পেরন করার কাজে। এটি লো-আর্থ অরবিটের স্যাটেলাইটেও হম্যান স্যাটেলাইট ব্যাবহার করা হয়। এই স্যাটেলাইটগুলোতে সাধারনত উপবৃত্তাকার হয়ে থাকে।
পোলার স্যাটেলাইট (Polar Orbit):
এই স্যাটেলাইটের অরবিটের সাথে পৃথিবীর কোন একদম এক সমকোন হয়ে থাকে। এটি NPOESS স্যাটেলাইট সমূহ প্রত্যেকবার ঘূর্ণনের সময় দক্ষিন মেরু এবং উত্তর মেরু এই দুই মেরুর উপড়ে দিয়েই চলে ।
সান সিষ্ক্রোনাস অরবিট স্যাটেলাইট (Sun Synchronous Orbits- Satellite ):
এটির নাম সূর্যের সাথে মিলিয়ে রাখা হয়েছে সান সিষ্ক্রোনাস অরবিট স্যাটেলাইট । এই স্যাটেলাইটগুলাতে এমন ভাবে পৃথিবীর সাথে ঘােরে যাতে সবসময় সূর্যের আলোতে এর উপরে পড়ে। তাই বলা চলে এগুলাতে কখনই অন্ধকারে থাকে না। CRYoSAT-2 একটি সান সিষ্ক্রোনাস অরবিট স্যাটেলাইট ।


No comments

Powered by Blogger.